৫. হযরত ছালেহ (আলাইহিস সালাম)




‘আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পরে হযরত ছালেহ (আঃ) কওমে ছামূদ-এর প্রতি নবী হিসাবে প্রেরিত হন। [1] কওমে ‘আদ ও কওমে ছামূদ একই দাদা ‘ইরাম’-এর দু’টি বংশধারার নাম। এদের বংশ পরিচয় ইতিপূর্বে হূদ (আঃ)-এর আলোচনায় বিধৃত হয়েছে। কওমে ছামূদ আরবের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় বসবাস করত। তাদের প্রধান শহরের নাম ছিল ‘হিজ্র’ যা শামদেশ অর্থাৎ সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে একে সাধারণভাবে ‘মাদায়েনে ছালেহ’ বলা হয়ে থাকে। ‘আদ জাতির ধ্বংসের পর ছামূদ জাতি তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। তারাও ‘আদ জাতির মত শক্তিশালী ও বীরের জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্য বিদ্যায় খুবই পারদর্শী ছিল। সমতল ভূমিতে বিশালকায় অট্টালিকা নির্মাণ ছাড়াও পর্বতগাত্র খোদাই করে তারা নানা রূপ প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করত। তাদের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলী আজও বিদ্যমান রয়েছে। এগুলোর গায়ে ইরামী ও ছামূদী বর্ণমালার শিলালিপি খোদিত রয়েছে। অভিশপ্ত অঞ্চল হওয়ার কারণে এলাকাটি আজও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কেউ সেখানে বসবাস করে না। ৯ম হিজরীতে তাবূক যুদ্ধে যাওয়ার পথে মুসলিম বাহিনী হিজ্রে অবতরণ করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে নিষেধ করে বলেন,

لاَ تَدْخُلُوا مَسَاكِنَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ إِلاَّ أَنْ تَكُونُوا بَاكِيْنَ أَنْ يُصِيبَكُمْ مَا أَصَابَهُمْ-

‘তোমরা ঐসব অভিশপ্তদের এলাকায় প্রবেশ করো না ক্রন্দনরত অবস্থায় ব্যতীত। যদি ক্রন্দন করতে না পার, তাহ’লে প্রবেশ করো না। তাহ’লে তোমাদের উপর ঐ গযব আসতে পারে, যা তাদের উপর এসেছিল’। [2] রাসূলের এই বক্তব্যের মধ্যে সুক্ষ্ম তাৎপর্য এই যে, এগুলি দেখে যদি মানুষ আল্লাহর গযবে ভীত না হয়, তাহ’লে তাদের অন্তর শক্ত হয়ে যাবে এবং ঐসব অভিশপ্তদের মত অহংকারী ও হঠকারী আচরণ করবে। ফলে তাদের উপর অনুরূপ গযব নেমে আসবে, যেরূপ ইতিপূর্বে ঐসব অভিশপ্তদের উপর নেমে এসেছিল।

পার্থিব বিত্ত-বৈভব ও ধনৈশ্বর্যের পরিণতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অশুভ হয়ে থাকে। বিত্তশালীরা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভুলে গিয়ে ভ্রান্ত পথে পা বাড়ায়। ছামূদ জাতির বেলায়ও তাই হয়েছিল। অথচ কওমে নূহের কঠিন শাস্তির ঘটনাবলী তখনও লোকমুখে আলোচিত হ’ত। আর কওমে ‘আদ-এর নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনা তো তাদের কাছে একপ্রকার টাটকা ঘটনাই ছিল। অথচ তাদের ভাইদের ধ্বংসস্ত্তপের উপরে বড় বড় বিলাসবহুল অট্টালিকা নির্মাণ করে ও বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে তারা পিছনের কথা ভুলে গেল। এমনকি তারা ‘আদ জাতির মত অহংকারী কার্যকলাপ শুরু করে দিল। তারা শিরক ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত হ’ল। এমতাবস্থায় তাদের হেদায়াতের জন্য তাদেরই বংশের মধ্য হ’তে ছালেহ (আঃ)-কে আল্লাহ নবী মনোনীত করে পাঠালেন।

কওমে ছামূদ-এর প্রতি হযরত ছালেহ (আঃ)-এর দাওয়াত :

পথভোলা জাতিকে হযরত ছালেহ (আঃ) সর্বপ্রথম তাওহীদের দাওয়াত দিলেন। তিনি তাদেরকে মূর্তিপূজাসহ যাবতীয় শিরক ও কুসংস্কার ত্যাগ করে এক আললাহর ইবাদত ও তাঁর প্রেরিত বিধান সমূহের প্রতি আনুগত্যের আহবান জানালেন। তিনি যৌবনকালে নবুঅতপ্রাপ্ত হন। তখন থেকে বার্ধক্যকাল অবধি তিনি স্বীয় কওমকে নিরন্তর দাওয়াত দিতে থাকেন। কওমের দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা তাঁর উপরে ঈমান আনলেও শক্তিশালী ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা তাঁকে অস্বীকার করে। ছালেহ (আঃ)-এর দাওয়াত সম্পর্কে সূরা আ‘রাফের ৭৩-৭৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

وَإِلَى ثَمُوْدَ أَخَاهُمْ صَالِحاً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ قَدْ جَاءتْكُمْ بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ هَـذِهِ نَاقَةُ اللهِ لَكُمْ آيَةً فَذَرُوْهَا تَأْكُلْ فِيْ أَرْضِ اللهِ وَلاَ تَمَسُّوْهَا بِسُوْءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ، وَاذْكُرُوْا إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَاءَ مِنْ بَعْدِ عَادٍ وَبَوَّأَكُمْ فِي الأَرْضِ تَتَّخِذُوْنَ مِنْ سُهُوْلِهَا قُصُوْراً وَتَنْحِتُوْنَ الْجِبَالَ بُيُوْتاً فَاذْكُرُوْا آلآءَ اللهِ وَلاَ تَعْثَوْا فِي الأَرْضِ مُفْسِدِيْنَ، قَالَ الْمَلأُ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا مِنْ قَوْمِهِ لِلَّذِيْنَ اسْتُضْعِفُوْا لِمَنْ آمَنَ مِنْهُمْ أَتَعْلَمُوْنَ أَنَّ صَالِحاً مُّرْسَلٌ مِّن رَّبِّهِ قَالُوْا إِنَّا بِمَا أُرْسِلَ بِهِ مُؤْمِنُوْنَ، قَالَ الَّذِيْنَ اسْتَكْبَرُوْا إِنَّا بِالَّذِيْ آمَنتُمْ بِهِ كَافِرُوْنَ، فَعَقَرُوا النَّاقَةَ وَعَتَوْا عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ وَقَالُوا يَا صَالِحُ ائْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِنْ كُنْتَ مِنَ الْمُرْسَلِيْنَ، فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوْا فِيْ دَارِهِمْ جَاثِمِيْنَ، فَتَوَلَّى عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّيْ وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَكِن لاَّ تُحِبُّوْنَ النَّاصِحِيْنَ- (الأعراف ৭৩-৭৯)-

অনুবাদ: ‘ছামূদ জাতির নিকটে (আমরা প্রেরণ করেছিলাম) তাদের ভাই ছালেহকে। সে বলল, হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ হ’তে একটি প্রমাণ এসে গেছে। এটি আল্লাহর উষ্ট্রী, তোমাদের জন্য নিদর্শন স্বরূপ। অতএব তোমরা একে ছেড়ে দাও আল্লাহর যমীনে চরে বেড়াবে। তোমরা একে অন্যায়ভাবে স্পর্শ করবে না। তাতে মর্মান্তিক শাস্তি তোমাদের পাকড়াও করবে’ (আ‘রাফ ৭/৭৩)। ‘তোমরা স্মরণ কর, যখন আল্লাহ তোমাদেরকে ‘আদ জাতির পরে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেন এবং তোমাদেরকে পৃথিবীতে ঠিকানা করে দেন। সেমতে তোমরা সমতল ভূমিতে অট্টালিকা সমূহ নির্মাণ করেছ এবং পাহাড়ের গায়ে খোদাই করে প্রকোষ্ঠ সমূহ নির্মাণ করেছ। অতএব তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ সমূহ স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করো না’ (৭৪)। কিন্তু তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক নেতারা ঈমানদার দুর্বল শ্রেণীর উদ্দেশ্যে বলল, ‘তোমরা কি জানো যে, ছালেহ তার প্রভুর পক্ষ হ’তে প্রেরিত নবী? তারা বলল, আমরা তো তার আনীত বিষয় সমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারী’ (৭৫)। ‘(জবাবে) দাদ্ভিক নেতারা বলল, তোমরা যে বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করেছ, আমরা সে বিষয়ে অস্বীকারকারী’ (৭৬)। ‘অতঃপর তারা উষ্ট্রীকে হত্যা করল এবং তাদের প্রভুর আদেশ অমান্য করল। তারা বলল, হে ছালেহ! তুমি নিয়ে এস যদ্বারা তুমি

Contact

Talk to us

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit. Dolores iusto fugit esse soluta quae debitis quibusdam harum voluptatem, maxime, aliquam sequi. Tempora ipsum magni unde velit corporis fuga, necessitatibus blanditiis.

Address:

৪৭/ দক্ষিণ বেগুনবাড়ি তেজগাঁও শিল্প এলাকা ঢাকা ১২০৮

Work Time:

সোমবার - শুক্রবার থেকে সকাল 9 টা থেকে বিকাল 5 টা

Phone:

+88 019 4145 2627