২২-২৩. হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহ্ইয়া (আলাইহিমাস সালাম)



 যাকারিয়া ও ইয়াহইয়া সুলায়মান পরবর্তী দুই নবী পরস্পরে পিতা-পুত্র ছিলেন এবং বায়তুল মুক্বাদ্দাসের অধিবাসী ছিলেন। ইয়াহইয়া ছিলেন পরবর্তী নবী ঈসা (আঃ)-এর আপন খালাতো ভাই এবং বয়সে ছয় মাসের বড়। তিনি ঈসার ছয় মাস পূর্বেই দাওয়াতের কাজ শুরু করেন। [2] বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে সূরা আন‘আমে কেবল ১৮জন নবীর নামের তালিকায় তাঁদের নাম উল্লেখিত হয়েছে। বাকী অন্য সূরাগুলিতে খুবই সংক্ষেপে কেবল ইয়াহ্ইয়ার জন্ম বৃত্তান্ত সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে।

যাকারিয়া (আঃ) সম্পর্কে কুরআনে কেবল এতটুকু বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি মারিয়ামের লালন-পালনকারী ছিলেন। এ বিষয়ে আল্লাহ সূরা আলে-ইমরানে যা বলেন, তার সার-সংক্ষেপ এই যে, ইমরানের স্ত্রী মানত করেছিলেন যে, আমার গর্ভের সন্তানকে আমি আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করে দিলাম। তিনি ধারণা করেছিলেন যে, তাঁর একটি পুত্র সন্তান হবে এবং তাকে তিনি আল্লাহর ঘর বায়তুল মুক্বাদ্দাসের খিদমতে নিয়োগ করবেন। কিন্তু পুত্রের স্থলে কন্যা সন্তান অর্থাৎ মারিয়াম জন্মগ্রহণ করলে তিনি হতাশ হয়ে পড়েন। আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, لَيْسَ الذَّكَرُ كَالأُنْثَى ‘এই কন্যার মত কোন পুত্রই নেই’ (আলে-ইমরান ৩/৩৬)।

এক্ষণে যেহেতু মানত অনুযায়ী তাকে মসজিদের খেদমতে উৎসর্গ করতে হবে। কিন্তু সেখানে তার অভিভাবক কে হবে? সম্ভবতঃ ঐসময় মারিয়ামের পিতা জীবিত ছিলেন না। বংশের লোকেরা সবাই এই পবিত্র মেয়েটির অভিভাবক হ’তে চায়। ফলে অবশেষে লটারীর ব্যবস্থা হয়। সেখানে মারিয়ামের খালু এবং তৎকালীন নবী হযরত যাকারিয়া (আঃ)-এর নাম আসে। এ ঘটনাটিই আল্লাহপাক তাঁর শেষনবীকে শুনাচ্ছেন নিম্নোক্ত ভাষায়-

ذَلِكَ مِنْ أَنبَاء الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيكَ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يُلْقُون أَقْلاَمَهُمْ أَيُّهُمْ يَكْفُلُ مَرْيَمَ وَمَا كُنتَ لَدَيْهِمْ إِذْ يَخْتَصِمُونَ- (آل عمران ৪৪)-

‘(মারিয়ামের বিষয়টি) হলো গায়েবী সংবাদ, যা আমরা আপনাকে প্রত্যাদেশ করছি। আপনি তো তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা লটারীর মাধ্যমে প্রতিযোগিতা করছিল এ ব্যাপারে যে, কে মারিয়ামকে প্রতিপালন করবে? আর আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা এ বিষয়ে ঝগড়া করছিল’ (আলে ইমরান ৩/৪৪)। ‘অতঃপর আল্লাহ তাকে যাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে অর্পণ করলেন’ (আলে ইমরান ৩/৩৭)।

মারিয়াম মসজিদের সংলগ্ন মেহরাবে থাকতেন। যাকারিয়া (আঃ) তাকে নিয়মিত দেখাশুনা করতেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ছিল এই যে, যখনই তিনি মেহরাবে আসতেন, তখনই সেখানে নতুন নতুন তাজা ফল-ফলাদি ও খাদ্য-খাবার দেখতে পেতেন। তিনি একদিন এ বিষয়ে মারিয়ামকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, هُوَ مِنْ عِندِ اللهِ ‘এসব আল্লাহর নিকট থেকে আসে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বেহিসাব রিযিক দান করেন’ (আলে ইমরান ৩/৩৭)।

সন্তান লাভের জন্য যাকারিয়ার দো‘আ :

সম্ভবতঃ শিশু মারিয়ামের উপরোক্ত কথা থেকেই নিঃসন্তান বৃদ্ধ যাকারিয়ার মনের কোণে আশার সঞ্চার হয় এবং চিন্তা করেন যে, যিনি ফলের মৌসুম ছাড়াই মারিয়ামকে তাজা ফল সরবরাহ করেছেন, নিশ্চয়ই তিনি বৃদ্ধ দম্পতিকে সন্তান দান করবেন। অতঃপর তিনি বুকে সাহস বেঁধে আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করেন। যেমন আল্লাহ বলেন,

هُنَالِكَ دَعَا زَكَرِيَّا رَبَّهُ قَالَ رَبِّ هَبْ لِيْ مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيْعُ الدُّعَاءَ- (آل عمران ৩৮)-

‘সেখানেই যাকারিয়া তার পালনকর্তার নিকটে প্রার্থনা করল এবং বলল, হে আমার পালনকর্তা!  তোমার  নিকট  থেকে  আমাকে  পূত-পবিত্র সন্তান দান কর। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা শ্রবণকারী’ (আলে ইমরান ৩/৩৮)। একথাটি অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে নিম্নোক্ত ভাবে-

كهيعص- ذِكْرُ رَحْمَةِ رَبِّكَ عَبْدَهُ زَكَرِيَّا- إِذْ نَادَى رَبَّهُ نِدَاء خَفِيًّا- قَالَ رَبِّ إِنِّي وَهَنَ الْعَظْمُ مِنِّي وَاشْتَعَلَ الرَّأْسُ شَيْباً وَلَمْ أَكُن بِدُعَائِكَ رَبِّ شَقِيًّا- وَإِنِّي خِفْتُ الْمَوَالِيَ مِن وَرَائِي وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِرًا فَهَبْ لِي مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا- يَرِثُنِي وَيَرِثُ مِنْ آلِ يَعْقُوبَ وَاجْعَلْهُ رَبِّ رَضِيًّا- (مريم ২-৬)-

‘এটি আপনার পালনকর্তার অনুগ্রহের বিবরণ তার বান্দা যাকারিয়ার প্রতি’(মারিয়াম ২)। ‘যখন সে তার পালনকর্তাকে আহবান করেছিল নিভৃতে’। ‘সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমার অস্থি দুর্বল হয়ে গেছে এবং বার্ধক্যের কারণে মস্তক শ্বেত-শুভ্র হয়ে গেছে। হে প্রভু! আপনাকে ডেকে আমি কখনো নিরাশ হইনি’। ‘আমি ভয় করি আমার পরবর্তী বংশধরের। অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। অতএব আপনি নিজের পক্ষ থেকে আমাকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন’। ‘সে আমার স্থলাভিষিক্ত হবে এবং উত্তরাধিকারী হবে ইয়াকূব-বংশের এবং হে প্রভু! আপনি তাকে করুন সদা-সন্তুষ্ট’ (মারিয়াম ১৯/২-৬)।

জবাবে আল্লাহ বললেন,

يَا زَكَرِيَّا إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلاَمٍ اسْمُهُ يَحْيَى لَمْ نَجْعَلْ لَهُ مِن قَبْلُ سَمِيًّا- قَالَ رَبِّ أَنَّى يَكُونُ لِي غُلاَمٌ وَكَانَتِ امْرَأَتِي عَاقِراً وَقَدْ بَلَغْتُ مِنَ الْكِبَرِ عِتِيًّا- قَالَ كَذَلِكَ قَالَ رَبُّكَ هُوَ عَلَيَّ هَيِّنٌ وَقَدْ خَلَقْتُكَ مِن قَبْلُ وَلَمْ تَكُ شَيْئًا- قَالَ رَبِّ اجْعَلْ لِي آيَةً قَالَ آيَتُكَ أَلاَّ تُكَلِّمَ النَّاسَ ثَلاَثَ لَيَالٍ سَوِيًّا- فَخَرَجَ عَلَى قَوْمِهِ مِنَ الْمِحْرَابِ فَأَوْحَى إِلَيْهِمْ أَنْ سَبِّحُوا بُكْرَةً وَّعَشِيًّا- (مريم ৭-১১)-

‘হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম হবে ইয়াহইয়া। ইতিপূর্বে এই নামে আমি কারু নামকরণ করিনি’। ‘সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! কেমন করে পুত্র সন্তান হবে? অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। আর আমিও বার্ধক্যের শেষপ্রান্তে উপনীত’। ‘তিনি বললেন, এভাবেই হবে। তোমার প্রভু বলে দিয়েছেন যে, এটা আমার জন্য খুবই সহজ। আমি তো ইতিপূর্বে তোমাকে সৃষ্টি করেছি, যখন তুমি কিছুই ছিলে না’। ‘সে বলল, হে আমার পালনকর্তা! আমাকে একটি নিদর্শন প্রদান করুন। তিনি বললেন, তোমার নিদর্শন এই যে, তুমি (সুস্থ অবস্থায়) একটানা তিন দিন লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলতে পারবে না’। ‘অতঃপর সে কক্ষ থেকে বের হয়ে তার সম্প্রদ
Saffe

Contact

Talk to us

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit. Dolores iusto fugit esse soluta quae debitis quibusdam harum voluptatem, maxime, aliquam sequi. Tempora ipsum magni unde velit corporis fuga, necessitatibus blanditiis.

Address:

৪৭/ দক্ষিণ বেগুনবাড়ি তেজগাঁও শিল্প এলাকা ঢাকা ১২০৮

Work Time:

সোমবার - শুক্রবার থেকে সকাল 9 টা থেকে বিকাল 5 টা

Phone:

+88 019 4145 2627