১৩. হযরত শো‘আয়েব (আলাইহিস সালাম)





আল্লাহর গযবে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রধান ৬টি প্রাচীন জাতির মধ্যে পঞ্চম জাতি হ’ল ‘আহলে মাদইয়ান’। ‘মাদইয়ান’ হ’ল লূত সাগরের নিকটবর্তী সিরিয়া ও হিজাযের সীমান্তবর্তী একটি জনপদের নাম। যা অদ্যাবধি পূর্ব জর্ডনের সামুদ্রিক বন্দর ‘মো‘আন’ (معان )-এর অদূরে বিদ্যমান রয়েছে। কুফরী করা ছাড়াও এই জনপদের লোকেরা ব্যবসায়ের ওযন ও মাপে কম দিত, রাহাজানি ও লুটপাট করত। অন্যায় পথে জনগণের মাল-সম্পদ ভক্ষণ করত। الأيكة ) বলে একটা গাছকে তারা পূজা করত। যার আশপাশে জঙ্গল বেষ্টিত ছিল।

মাদইয়ান (مدين ) ছিলেন হাজেরা ও সারাহর মৃত্যুর পরে হযরত ইবরাহীমের আরব বংশোদ্ভূত কেন‘আনী স্ত্রী ক্বানতূরা বিনতে ইয়াক্বত্বিন (قنطورا بنت يقطن) -এর ৬টি পুত্র সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র। [4]

উল্লেখ্য যে, হযরত শো‘আয়েব (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ১০টি সূরায় ৫৩টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। [5]

হযরত শো‘আয়েব (আঃ)-এর দাওয়াত :

ধ্বংসপ্রাপ্ত বিগত কওমগুলোর বড় বড় কিছু অন্যায় কর্ম ছিল। যার জন্য বিশেষভাবে সেখানে নবী প্রেরিত হয়েছিলেন। শো‘আয়েব-এর কওমেরও তেমনি মারাত্মক কয়েকটি অন্যায় কর্ম ছিল, যেজন্য খাছ করে তাদের মধ্য থেকে তাদের নিকটে  শো‘আয়েব (আঃ)-কে প্রেরণ করা হয়। তিনি তাঁর কওমকে যে দাওয়াত দেন, তার মধ্যেই বিষয়গুলোর উল্লেখ রয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,

وَإِلَى مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْباً قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـهٍ غَيْرُهُ قَدْ جَاءتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ فَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ وَلاَ تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءهُمْ وَلاَ تُفْسِدُوا فِي الأَرْضِ بَعْدَ إِصْلاَحِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ- وَلاَ تَقْعُدُوا بِكُلِّ صِرَاطٍ تُوعِدُونَ وَتَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللهِ مَنْ آمَنَ بِهِ وَتَبْغُونَهَا عِوَجاً وَاذْكُرُوا إِذْ كُنتُمْ قَلِيلاً فَكَثَّرَكُمْ وَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ- وَإِنْ كَانَ طَآئِفَةٌ مِّنكُمْ آمَنُوا بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ وَطَآئِفَةٌ لَّمْ يْؤْمِنُوا فَاصْبِرُوا حَتَّى يَحْكُمَ اللهُ بَيْنَنَا وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِينَ- (الأعراف ৮৫-৮৭)-

‘আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শো‘আয়েবকে প্রেরণ করেছিলাম। সে তাদের বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোন উপাস্য নেই। তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে সুস্পষ্ট প্রমাণ এসে গেছে। অতএব তোমরা মাপ ও ওযন পূর্ণ কর। মানুষকে তাদের মালামাল কম দিয়ো না। ভূপৃষ্ঠে সংস্কার সাধনের পর তোমরা সেখানে অনর্থ সৃষ্টি করো না। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা বিশ্বাসী হও’। ‘তোমরা পথে-ঘাটে এ কারণে বসে থেকো না যে, ঈমানদারদের হুমকি দেবে, আল্লাহর পথে বাধা সৃষ্টি করবে ও তাতে বক্রতা অনুসন্ধান করবে। স্মরণ কর, যখন তোমরা সংখ্যায় অল্প ছিলে, অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে আধিক্য দান করেছেন এবং লক্ষ্য কর কিরূপ অশুভ পরিণতি হয়েছে অনর্থকারীদের’। ‘আর যদি তোমাদের একদল ঐ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে যা নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং আরেক দল বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর যে পর্যন্ত না আল্লাহ আমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন। কেননা তিনিই শ্রেষ্ঠ ফায়ছালাকারী’ (আ‘রাফ ৭/৮৫-৮৭)।

কওমে শো‘আয়েব-এর ধর্মীয় ও সামাজিক অবস্থা এবং দাওয়াতের সারমর্ম:

উপরোক্ত আয়াত সমূহে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি প্রতীয়মান হয়। প্রথমতঃ তারা আল্লাহর হক ও বান্দার হক দু’টিই নষ্ট করেছিল। আল্লাহর হক হিসাবে তারা বিশ্বাসের জগতে আল্লাহকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির পূজায় লিপ্ত হয়েছিল কিংবা আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে শরীক করেছিল। তারা আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে দিয়েছিল। দুনিয়াবী ধনৈশ্বর্যে ও বিলাস-ব্যসনে ডুবে গিয়ে তারা আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলী এবং তাঁর হক সম্পর্কে গাফেল হয়ে গিয়েছিল। সেই সাথে নিজেদের পাপিষ্ঠ জীবনের মুক্তির  জন্য বিভিন্ন সৃষ্ট বস্ত্তকে শরীক সাব্যস্ত করে তাদের অসীলায় মুক্তি কামনা করত। এভাবে তারা আল্লাহ ও তাঁর গযবের  ব্যাপারে নিঃশংক হয়ে গিয়েছিল। সেকারণ সকল নবীর ন্যায় শো‘আয়েব (আঃ) সর্বপ্রথম আক্বীদা সংশোধনের জন্য ‘তাওহীদে ইবাদত’-এর আহবান জানান। যাতে তারা সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে স্রেফ আল্লাহর ইবাদত করে এবং সকল ব্যাপারে স্রেফ আল্লাহর ও তাঁর নবীর আনুগত্য করে। তিনি নিজের নবুঅতের প্রমাণ স্বরূপ তাদেরকে মু‘জেযা প্রদর্শন করেন। যা স্বয়ং প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে ‘সুস্পষ্ট প্রমাণ’ রূপে তাঁর নিকটে  আগমন করে।

দ্বিতীয়তঃ তারা মাপ ও ওযনে কম দিয়ে বান্দার হক নষ্ট করত। সেদিকে ইঙ্গিত করে শো‘আয়েব (আঃ) বলেন, ‘তোমরা মাপ ও ওযন পূর্ণ কর এবং মানুষের দ্রব্যাদিতে কম দিয়ে তাদের ক্ষতি করো না’ (আ‘রাফ ৭/৮৫)। আয়াতের প্রথমাংশে খাছভাবে মাপ ও ওযন পূর্ণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং শেষাংশে সর্বপ্রকার হকে ত্রুটি করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সে হক মানুষের ধন-সম্পদ, ইযযত-আবরূ বা যেকোন বস্ত্তর সাথে সম্পর্কযুক্ত হৌক না কেন। বস্ত্ততঃ দ্রব্যাদির মাপ ও ওযনে কম দেওয়া যেমন মহা অপরাধ, তেমনি কারু ইযযত-আবরূ নষ্ট করা, কারু পদমর্যাদা অনুযায়ী তাকে সম্মান না করা, যাদের আনুগত্য করা যরূরী তাদের আনুগত্যে ত্রুটি করা অথবা যাকে সম্মান করা ওয়াজিব তার সম্মানে ত্রুটি করা ইত্যাদি সবই এ অপরাধের অন্তর্ভুক্ত, যা শো‘আয়েব (আঃ)-এর সম্প্রদায় করত। সে সমাজে মানীর মান ছিল না বা গুণীর কদর ছিল না।

তৃতীয়তঃ বলা হয়েছে, ‘তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না, সেখানে সংস্কার সাধিত হওয়ার পর’ (আ‘রাফ ৭/৮৫)। অর্থাৎ  আল্লাহ পৃথিবীকে  যেভাবে আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সবদিক দিয়ে সুন্দর ও সামঞ্জস্যশীল করে সৃষ্টি করেছেন, তোমরা তাতে ব্যত্যয় ঘটিয়ো না এবং কোনরূপ অনর্থ সৃষ্টি করো না।

চতুর্থতঃ তোমরা মানুষকে ভীতি প্রদর্শন ও আল্লাহর পথে বাধা দানের উদ্দেশ্যে পথে-ঘাটে ওঁৎ পেতে থেকো না (আ‘রাফ ৭/৮৬)। এর দ্বারা মাদইয়ান বাসীদের আরেকটি মারাত্মক দোষের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, তারা  রাস্তার মোড়ে চৌকি বসিয়ে লোকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায় করত ও লুটপাট করত। সাথে সাথে তারা লোকদেরকে

Contact

Talk to us

Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipisicing elit. Dolores iusto fugit esse soluta quae debitis quibusdam harum voluptatem, maxime, aliquam sequi. Tempora ipsum magni unde velit corporis fuga, necessitatibus blanditiis.

Address:

৪৭/ দক্ষিণ বেগুনবাড়ি তেজগাঁও শিল্প এলাকা ঢাকা ১২০৮

Work Time:

সোমবার - শুক্রবার থেকে সকাল 9 টা থেকে বিকাল 5 টা

Phone:

+88 019 4145 2627